গল্প রহস্যজনক গল্প

নিখোঁজ হীরার শেষ খোঁজ – রুপন নাথ

রাহুল ও সীমন্তিকা পুরীতে গিয়েছিলো। রাহুল সবসময় নিজস্ব গাম্ভীর্য নিয়ে চলে। সীমন্তিকা তার প্রেমিকা। তাদের দেখে মনে হয় বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের তুলনায় ভাইবোনের সম্পর্ক বেশি। কারণ, তারা সবসময় বাচ্চাদের মতো নিজেদের মধ্যে খুনসুটি করতে থাকে।

এমনই ভাবে পুরীর বীচে সন্ধ্যেবেলার দিকে তারা দুজনের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে কথা হচ্ছিলো, এই সময় তারা একটা মৃতদেহ দেখতে পায়, যা বালির উপরে উপর হয়ে পড়েছিলো। মৃত ব্যক্তি একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী, নাম অমৃত জানা। তার শরীরে ছুরির গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিলো, মুখের একপাশ রক্তে মাখামাখি। তার পরনে ছিলো দামি পোশাক, হাতে একটি ঘড়ি যা সময় দেখাচ্ছিলো রাত ৯টা ৪৫ মিনিট।

প্রথমে তারা ঘাবড়ে গেলেও, রাহুলের অনুসন্ধিৎসু মন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে শুরু করল। তার মতে, এটা নিছকই ডাকাতির ঘটনা নয়। পাশে পড়ে থাকা একটি ছোট্ট থলে খুলে দেখা গেল, তাতে একটি মূল্যবান হীরার বাক্স ছিলো, কিন্তু হীরেটি নেই! তার মানে, খুনের সাথে চুরির যোগ রয়েছে।

পুরী পুলিশের এসপি, অনিরুদ্ধ ব্যানার্জি এসে তদন্ত শুরু করেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেলো, অমৃত জানা পুরীতে এসেছিলো একটি বিশেষ কাজের জন্য। সে একটি দুর্লভ হীরা বিক্রি করতে এসেছিলো এক নামী ব্যবসায়ী, অমিত সাক্সেনার কাছে।

পুলিশ অমিত সাক্সেনার খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারে, তিনিও নিখোঁজ! তার হোটেলের রুমে গেলে দেখা যায়, দরজা খোলা, বিছানা অগোছালো। মনে হচ্ছে, তিনি খুব তাড়াহুড়ো করে বের হয়েছেন।

রাহুল ও সীমন্তিকা এই কেসে আরও গভীরে ঢুকে পড়ে। তাদের অনুসন্ধানে উঠে আসে, অমৃত জানার সাথে একটি রহস্যময় মহিলার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো, যার নাম উজ্জ্বলা মিত্র। সে স্থানীয় একজন ধনী ব্যবসায়ীর স্ত্রী, কিন্তু তার সম্পর্কে অনেক গুঞ্জন শোনা যায়। আরও জানা গেলো, তার বয়ফ্রেন্ড শেখর দেবনাথ একজন চতুর ও ধূর্ত মানুষ।

কিছু সূত্রের সাহায্যে রাহুল ও সীমন্তিকা একটি হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে, যেখানে দেখা যায়, অমৃত জানা ও উজ্জ্বলা মিত্র রাত ৮টা নাগাদ একসাথে ঢুকেছিলো। তবে উজ্জ্বলা বেরিয়ে এসেছিলেন রাত ৯টা ১৫ মিনিটে, একা!

গল্প আরও ঘনীভূত হয়, যখন অমিত সাক্সেনার মৃতদেহ একটি পুরনো বাগানে পাওয়া যায়। তার মাথার পেছনে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন, তার মানিব্যাগ এবং মোবাইল গায়েব!

রাহুলের অনুমান, এটি নিছক ডাকাতি নয়, বরং একটি ঠাণ্ডা মাথার পরিকল্পিত খুন। পরকীয়া, হীরার লোভ এবং প্রতিশোধের জালে জড়িয়ে গিয়েছে এই হত্যা রহস্য।

তদন্ত চলতে থাকে, এবং একসময় রহস্যের জট খুলতে থাকে ধীরে ধীরে…

===============

রাহুল আর সীমন্তিকা পুলিশ হেডকোয়ার্টারে গিয়ে জানতে পারে, অমৃত জানার মোবাইলের কললিস্টে শেষ নাম্বারটি ছিল উজ্জ্বলা মিত্রের। এর মানে উজ্জ্বলা যে কোনোভাবে এই খুনের সাথে জড়িত।

পরের দিন সকালে, রাহুল ও সীমন্তিকা উজ্জ্বলা মিত্রের বাড়িতে যায়। দরজা খুলতেই উজ্জ্বলা চমকে ওঠে, যেন কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে। রাহুল সরাসরি জিজ্ঞেস করল,

— “আপনি কি গতকাল রাত ৯টা নাগাদ অমৃত জানার সঙ্গে ছিলেন?”

উজ্জ্বলা চোখ নামিয়ে বলল, “হ্যাঁ, তবে সে আমাকে মিথ্যা বলেছিল। সে বলেছিল হীরেটি আসল, কিন্তু আমি পরে বুঝতে পারি, সেটি নকল। আমি তখনই চলে আসি।”

রাহুল খেয়াল করল, উজ্জ্বলার কপালে ঘাম।

ঠিক তখনই পুলিশের এক কনস্টেবল খবর নিয়ে এলো যে, উজ্জ্বলার বয়ফ্রেন্ড শেখর দেবনাথ পালিয়েছে!

এতে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়ে গেল। তাহলে কি শেখর-উজ্জ্বলা দুজনেই খুনের সঙ্গে জড়িত?

রাহুল এবার আরও গভীরে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় এবং পুলিশের সঙ্গে মিলে উজ্জ্বলার কল রেকর্ড চেক করতে বলে। ঠিক তখনই একটা চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসে— শেখর দেবনাথ শেষবার ফোন করেছিল অমিত সাক্সেনাকে, এবং সেই কলটি হয়েছিল রাত ৯টা ৩০ মিনিটে!

এবার রহস্যের দানা বাঁধতে শুরু করল। কিন্তু রহস্যের শেষ কোথায়? শেখর কি সত্যিই খুনি, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে?

===============

রাহুল বুঝতে পারে, উজ্জ্বলা শুধু নিরীহ সাক্ষী নন, বরং পুরো ঘটনার মূল চাবিকাঠি। সে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও, তার কথার অসঙ্গতি ধরা পড়ে।

ঠিক তখনই, পুলিশ রিপোর্ট পেল— উজ্জ্বলা মিত্রের লাশ মর্গ থেকে গায়েব!

এদিকে, রাহুল হঠাৎ খেয়াল করল, অমৃত জানার রেখে যাওয়া চিঠিতে একটি গোপন সংকেত ছিল: “R.T – The Shadow”

R.T? রণবীর ঠাকুর? ১০ বছর আগে ধরা পড়া হীরা চোরাচালানকারী! তাহলে কি রণবীর এখনো বেঁচে আছে?

শেষ পর্যন্ত, পুলিশের টেকনিক্যাল দল রণবীরের অবস্থান ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়। তাকে পুরীর এক গোপন ডেরায় পাওয়া যায়, যেখানে হীরার আসল কারবার চলছিল। পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ে রণবীর, শেখর ও তাদের দলের বাকিরা।

অবশেষে, সমস্ত রহস্য উন্মোচিত হয়— উজ্জ্বলাকে শেখর আর রণবীর মিলে খুন করেছিল, কারণ সে পুলিশের কাছে সত্যি বলে দিতে পারত। অমিত সাক্সেনাও তাদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে হীরার মালিকানার লড়াইয়ে খুন হয়।

রাহুল ও সীমন্তিকার বুদ্ধিমত্তা আর পুলিশের তৎপরতায় রহস্যের সমাধান হয়। দুর্লভ হীরাটি উদ্ধার করা হয় এবং আসল অপরাধীরা কারাগারে যায়।

এই কেস ছিল রাহুলের জীবনের অন্যতম কঠিন কেস, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো।

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *