বন্ধুরা, ভারতে কুম্ভমেলার একটা আলাদাই মাধুর্য আছে। এই মেলা হিন্দু ধর্মের সবথেকে বড়ো মেলার মধ্যে একটি। বারো বছর অন্তর একবার এই মেলার আয়োজন করা হয়। বহু মানুষ এই মেলায় আসেন এবং পবিত্র নদীতে স্নান করেন। কিন্তু ভাবার বিষয় হলো, কেন এই মেলা বারো বছর অন্তরই কেন পালন করা হয়?
বলা বাহুল্য, এই মেলার শুরু হওয়ার মাস খানেক আগে থেকেই প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে যায়। এর আয়োজন চারটে নদীর মিলনস্থলে আয়োজন করা হয়।
যা হলো উত্তরাখন্ডে অবস্থিত গঙ্গা নদীর তীরে হরিদ্বার, মধ্যপ্রদেশের শিপ্রা নদীর তীরে অবস্থিত উজ্জয়িনী, মহারাষ্ট্রের গোদাবরী নদীর তীরে নাসিক এবং উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত তিনটে নদী তথা গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থল প্রয়াগরাজ।
বলা হয়, যখন বৃহঃস্পতি কুম্ভরাশিতে এবং সুর্য মেষ রাশিতে প্রবেশ করে তখন মহাকুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়। বলা বাহুল্য প্রয়াগের কুম্ভমেলা সবথেকে গুরুত্বপূর্ন। বলা হয়, এই মেলার ইতিহাস 850 বছরেরও পুরনো। বলা হয়, আদি শঙ্করাচার্য এর সূচনা করেছিলেন। যার পর তার শিষ্যরা সন্যাস ধর্ম পালন করার জন্য এবং শুদ্ধস্নানের হেতু আয়োজন করেছিলেন।
আবার কারো মতে, কুম্ভমেলার আয়োজন আদিকালেই হয়ে গিয়েছিলো যখন সমুদ্রমন্থন হয়েছিলো। সমুদ্রমন্থন দেবতা ও অসুরদের দ্বারা হয়েছিলো। মন্থনের ফলে বহু বস্তুর আবির্ভাব ঘটে। যার মধ্যে অমৃত হলো একটি।
অমৃত পাওয়ার লালসায় দেবতা ও অসুরদের মধ্যে ভয়ংকর সংঘর্ষ হয়। যার ফলে অমৃতের কিছু বিন্দু পৃথিবীতে এসে পড়ে। যেখানে যেখানে ওই বিন্দু পড়েছিলো, সেখানে সেখানে কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়। বলা হয়, অমৃতের বিন্দু, প্রয়াগ, নাসিক, হরিদ্বার, ও উজ্জয়িনীতে পড়েছিলো। যার জন্য প্রতি বারো বছর অন্তর কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়েছিলো।
পৌরাণিক কথানুযায়ী, অমৃতকে অসুরদের থেকে রক্ষা করার জন্য চন্দ্রদেব অমৃতকে রক্ষা করেন অপরদিকে গুরু বৃহঃস্পতি কলসকে লুক্কায়িত করেন।
অপরদিকে সুর্যদেব কলসকে ভঙ্গুর হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেন। যার পর শনিদেব ইন্দ্রদেবের হাত থেকে কলসকে রক্ষা করেন।
এরজন্য এই গ্রহগুলির স্থান একরাশিতে অবস্থান করে, তখন মহাকুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়।
কারণ, এই গ্রহগুলির মিলিত প্রভাবে কলস রক্ষিত হয়েছিলো। এরপর ভগবান নারায়নের সাহায্যে দেবতাগণ অমৃতপান করতে সক্ষম হন।
শুধু তাই নয়, শাস্ত্রমতে, পৃথিবীবাসীর কাছে এক বছর দেবতাদের কাছে একদিনের সমান। এই হিসেবে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে পৃথিবীর গননানুসারে 12 বছর ধরে যুদ্ধ চলে। তাই 12 বছর এই কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়।
তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, কবে থেকে শুরু হয় কুম্ভমেলা?
বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, গুরু একরাশিতে এক বছর পর্যন্ত স্থায়ি থাকে। আর রাশিচক্র সম্পূর্ন হতে 12 বছর সময় নেয়। এর জন্য বারো বছর অন্তর কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়।
কুম্ভর জন্য নির্ধারিত স্থানে প্রতি তিনববছর অন্তর মেলার আয়োজন করা হয়।
বুহস্পতি যখন কুম্ভ রাশিতে এবং সূর্য মেষরাশিতে অবস্থান করে, তখস হরিদ্বারে কুম্ভমেলার সূচনা হয়।
এবার জানা যাক, কুম্ভমেলা কয় প্রকারের হয়।
মহাকুম্ভমেলাঃ এই মেলা কেবল উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজেই পালন করা হয়। এই মেলা প্রতি 144 বছরে 12 পূর্ন কুম্ভের পর আয়োজন করা হয়।
পূর্ন কুম্ভমেলাঃ এই মেলা 12 বছর অন্তর করা হয়।
বিশেষত ভারতে চারটি কুম্ভমেলা – প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, নাসিক ও উজ্জয়িনীতে আয়োজন করা হয়।
প্রতি বারো বছর অন্তর এই স্থানেই পালন করা হয়।
অর্ধকুম্ভমেলাঃ এই অর্ধকুম্ভমেলা ভারতে কেবল দুটি স্থানে তথা হরিদ্বার ও প্রয়াগরাজে প্রতি ছয় বছর অন্তর আয়োজন করা হয়।
কুম্ভমেলাঃ এই মেলা চারটে আলাদা আলাদা স্থানে আয়োজন করা হয়। এই মেলায় লক্ষাধিক লোক আধ্যাত্মিক উৎসাহের সাথে মিলিত হন।
মাঘ কুম্ভমেলাঃ
বলা বাহুল্য, এই মেলাকে মিনি কুম্ভমেলা বলেও অভিহিত করা হয়। এই মেলা প্রতি বছর কেবল প্রয়াগরাজেই পালন করা হয়।
হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, মাঘ মাসে এই মেলা পালন করা হয়। লক্ষাধিক ভক্তগণ পবিত্রস্নানে আসেন।
আশা করি, এবার বুঝতে পেরেছেন, কুম্ভমেলার আসল রহস্য। কমেন্ট বক্সে অবশ্যই লিখে জানাবেন, আপনি কখনো কুম্ভমেলায় যোগদান করেছেন কিনা।