সন্ধ্যার পর থেকে চারপাশের বাতাসে যেন এক ধরনের উষ্ণতা। আলোয় সাজানো বাড়ির প্রতিটি কোণে অতিথিদের আনাগোনা, হাসির ফোয়ারা আর সংগীতের মৃদু সুর এক অনন্য পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আজ অপু আর রূপালির বিয়ে।
রূপালি বসে আছে তার সাজঘরে। লাল বেনারসি, গা ভর্তি গয়না, আর চোখেমুখে এক অদ্ভুত এক্সপ্রেশন—আনন্দ, ভয়, শিহরণ সব যেন একসাথে মিশে আছে। আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখছে, কিন্তু মনে হচ্ছে তার মন অন্য কোথাও। ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়ে।
— “রূপালি, আমি আসতে পারি?”
ওপরের গলার স্বর অপু, যার সঙ্গে আজই নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে সে। হালকা হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটে।
— “এসো।”
অপু প্রবেশ করতেই ঘরভর্তি আতর আর ফুলের গন্ধ আরও মিষ্টি হয়ে ওঠে। অপু রূপালির পাশে এসে বসে, তার হাতে হাত রাখে।
— “কেমন লাগছে তোমার?”
— “ভালো… কিন্তু একটু অদ্ভুতও লাগছে।”
অপু অবাক হয়ে তাকায়।
— “অদ্ভুত কেন?”
রূপালি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, “জানি না। মনে হচ্ছে, আজকের রাতটা… কেমন যেন। বুঝিয়ে বলতে পারবো না।”
অপু হাসে। “এই অনুভূতি স্বাভাবিক, নতুন জীবনে পা রাখার আগে সবাই এমন অনুভব করে।”
বাইরে বিয়ের শেষ আয়োজন চলছে। অতিথিরা বিদায় নিচ্ছে, কিন্তু সবার মুখে এখনো আনন্দের ছাপ। ধীরে ধীরে বাড়ির পরিবেশ শান্ত হয়ে আসে।
রাত গভীর হয়। রূপালি বাসরঘরে আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখছে। তার চোখে এক ধরনের বিভ্রান্তি। অপু পেছন থেকে এসে তার কাঁধে হাত রাখে।
— “এখনও কি অদ্ভুত লাগছে?”
রূপালি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ে। ঠিক তখনই বাইরের আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়, আর সাথে সাথে পুরো বাড়ি অন্ধকারে ঢেকে যায়।
— “ওহ! লাইট চলে গেল?” অপু বলে ওঠে।
বাইরে কিছু সাড়া-শব্দ হয়, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
কয়েক মুহূর্ত পর আলো ফিরে আসে। কিন্তু অপু কিছু একটা লক্ষ্য করে।
রূপালি যেখানে বসে ছিল, সেখানে নেই।
— “রূপালি?”
কেউ সাড়া দেয় না।
অপু উঠে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকায়। ঠিক তখনই চোখ পড়ে ঘরের মেঝেতে—রক্তের এক টুকরো ছোপ, আর তার মাঝেই নিথর পড়ে আছে রূপালি।
— “রূপালি!”
অপু থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে রূপালির দেহের কাছে বসে। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারে—রূপালি আর নিঃশ্বাস নিচ্ছে না।
এই আনন্দঘন রাতে, যেখানে হাসির শব্দে মুখরিত ছিল চারপাশ, সেখানে এখন শুধুই এক ভয়ংকর নীরবতা।
(পর্ব ১ সমাপ্ত)