গল্প রহস্যজনক গল্প

অন্ধকারের পর্দা (পর্ব 3)

রূপালির মৃত্যু রহস্য যতই গভীরে প্রবেশ করছে, ততই নতুন নতুন সন্দেহভাজন উঠে আসছে। রাহুল ও সীমন্তিকার তদন্তে বেরিয়ে আসছে অপুর পরিবারের অজানা কিছু দিক।

রাহুল ও সীমন্তিকা ঠিক করলো পরিবারের সকলকে একে একে জেরা করতে লাগলো।

রাহুল ও সীমন্তিকা এবার অপুর মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বসে। তিনি একজন প্রবল সুচিবাই, অত্যন্ত কঠোর স্বভাবের। রূপালির প্রতি তার মনোভাব কোনোদিনই ভালো ছিল না।

সীমন্তিকা প্রশ্ন করল,
— “আপনি কি রূপালিকে পছন্দ করতেন?”

অপুর মা গম্ভীর হয়ে গেলেন।
— “ও আমার ছেলের যোগ্য ছিল না। ওর মতো মেয়ের জায়গা আমাদের পরিবারে নয়।”

— “আপনি কি বিয়েতে মত দিয়েছিলেন?”

— “অপু আমাকে জোর করেছিল, বলেছিল সে প্রেম করে। আমি কখনোই রাজি ছিলাম না।”

রাহুল লক্ষ্য করল, তার চোখে কোনো শোক নেই। বরং যেন একপ্রকার বিরক্তি।

— “আপনার মনে হয়, এই ঘটনার পেছনে কেউ থাকতে পারে?”

— “আমি জানি না, তবে এটা নিশ্চিত যে রূপালি আমাদের জন্য সৌভাগ্যের নয়।”

রাহুল ও সীমন্তিকা একে অপরের দিকে তাকাল। এই মহিলার মনে যেন কোনো দুঃখ নেই।

এরপর তারা সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে।

রাহুল এরপর অপুর জ্যাঠার ছেলে আর্যের সাথে দেখা করল। আর্য বরাবরই শান্ত স্বভাবের, কিন্তু এই ঘটনার পর থেকে যেন অস্বস্তিতে আছে।

— “আপনারা সম্পত্তি নিয়ে আগে বিবাদে ছিলেন, তাই তো?”

আর্য কুঁচকে গেল।
— “হ্যাঁ, তবে এখন সব মিটে গেছে।”

— “আপনার কি মনে হয়, কেউ ইচ্ছে করেই অপুকে টার্গেট করতে চেয়েছিল?”

আর্য যেন গম্ভীর হয়ে গেল।
— “অপু মরলে সবচেয়ে বেশি লাভ আমারই হবে, তাই তো?”

সীমন্তিকা মৃদু হেসে বলল,
— “আমরা সেটাই জানার চেষ্টা করছি।”

— “শুনুন, আমি আমার দিক থেকে কিছু করিনি। হ্যাঁ, অপু আর আমার সম্পর্ক ভালো ছিল না, কিন্তু খুন করব এমনটা ভাবতে পারবেন?”

রাহুল এক মুহূর্তের জন্য থামল।
— “আপনার কোথায় ছিলেন লাইট যাওয়ার সময়?”

আর্য মুখ ফিরিয়ে নিল।
— “আমার ঘরে ছিলাম।”

রাহুল ও সীমন্তিকা এবার সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল। এরপর তারা সেখান থেকে বাইরে বেড়িয়ে এসে এক চায়ের দোকানে গিয়ে রাহুল সিগারেট নিতে গেলে। সীমন্তিকা রেগে যায়।

  • তুমি আবার শুরু করেছো?

রাহুল আমতা আমতা করে বললো,

  • না মানে! আমি বুঝতে পারিনি। আমি ভুল করে…..

এরপর কথা ঘুরিয়ে তদন্তের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও তেমন কোন লাভ হলো না। বেশ কিছুক্ষণ ধরে সীমন্তিকার কথা শোনার পর, কোন কথা না বলে ঘরের ভিতর চলে আসে।

তদন্তে উঠে এল দীপু ও বিবেকের নাম।

দীপু রূপালির বেস্টফ্রেন্ড, কিন্তু সে অপুকে ভালোবাসত।

— “তুমি অপুকে ভালোবাসতে?” সীমন্তিকা সরাসরি জিজ্ঞেস করল।

দীপু চুপ করে রইল, তারপর বলল,
— “হ্যাঁ, কিন্তু ও আমাকে কোনোদিন ভালোবাসেনি।”

— “তাহলে তুমি কি রাগ করেছিলে?”

— “অপু ভুল মেয়েকে বেছে নিয়েছিল।” দীপুর চোখ চকচক করছিল।

রাহুল ও সীমন্তিকা এবার বিবেকের সাথে দেখা করল। সে রূপালিকে ভালোবাসত, কিন্তু রূপালি তাকে পাত্তা দিত না।

— “তুমি কি রূপালিকে হত্যা করতে পারতে?”

বিবেক রাগে ফেটে পড়ল,
— “আমি রূপালিকে ভালোবাসতাম! কেন আমি ওকে মারব?”

সীমন্তিকা শান্ত গলায় বলল,
— “কেননা তুমি ওকে না পেলে অন্য কাউকে ওর সঙ্গে দেখতে চাইতে না।”

বিবেক কিছু বলল না।

তদন্ত যখন গভীরে যাচ্ছে, তখনই বাড়িতে আরেকটি খুন হয়।

রাতে সবাই যখন ঘুমোচ্ছিল, তখনই এক চিৎকার শোনা যায়। রাহুল ও সীমন্তিকা ছুটে যায়।

দেখা যায়, দীপু নিথর পড়ে আছে, তার শরীরে ছুরির গভীর ক্ষত।

রাহুল ফিসফিস করে বলল,
— “কেউ আমাদের এক ধাপ এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না। রহস্য আরও গভীর হচ্ছে।”

সীমন্তিকা বলল,
— “এটা কাকতালীয় নয়, খুনি আমাদের খুব কাছেই রয়েছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *