অন্যান্য পুরাণকথা হিন্দু পুরাণ

অশ্বত্থামার আরো একবার প্রমাণ পাওয়া গেলো

কিছু বছর আগে মধ্যপ্রদেশে এক ডাক্তার এক অদ্ভুত ঘটনা বলেছিলেন। তার কাছে এক রোগী এসেছিল যার কপালে একটা অদ্ভুত ক্ষত ছিল। ডাক্তার বলেছিলেন, ক্ষতটা দেখে মনে হচ্ছিল যেন রোগীর মস্তিষ্ক তার কপাল থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে। ডাক্তার অনেক ওষুধ এবং চিকিৎসা করেছিলেন, এমনকি ক্ষত সেলাই করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি। মজা করে ডাক্তার রোগীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তুমি কি অশ্বত্থামা?’ এই কথা শোনার পর রোগী হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। কেউ তাকে বাইরে যেতে দেখেনি। এই ঘটনা ডাক্তারকে আজও ভাবিয়ে তোলে।

পৃথ্বীরাজ চৌহানের বিষয়ে লেখা পৃথ্বীরাজ রাসো গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ১৯৯২ সালে মহম্মদ ঘোরির সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের পর, পৃথ্বীরাজ এক বৃদ্ধ লোকের সঙ্গে দেখা করেন। তার কপালে একটা অদ্ভুত ক্ষত ছিল, যা কিছুতেই সেরে উঠছিল না। পৃথ্বীরাজ যখন তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন লোকটি স্বীকার করেন, তিনিই অশ্বত্থামা।

অশ্বত্থামা ছিলেন গুরু দ্রোণ ও কৃপীর পুত্র। তার জন্ম হয়েছিল এক জঙ্গলের গুহায়, যা বর্তমানে দেরাদুনের উত্তরাখণ্ডের তপকেশ্বর মহাদেব মন্দির নামে পরিচিত। তার কপালে একটি দিব্য মণি ছিল, যা তাকে অসীম শক্তি এবং অমরত্ব প্রদান করেছিলো। এই মণি তাকে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তি, বার্ধক্য, রোগ, অস্ত্র এবং দেবতাদের থেকেও রক্ষা করত।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে, অশ্বত্থামা দুর্যোধনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন। কৃপাচার্য ও কৃতকর্মাকে সঙ্গে নিয়ে অশ্বত্থামা রাতে পাণ্ডবদের শিবিরে আক্রমণ করেন। তিনি শিবিরে ঢুকে পান্ডব ও পান্ডবসেনাদের মধ্যে অন্যতম যোদ্ধাকে হত্যা করেন। কারণ তিনি মনে করেছিলেন, তিনি পান্ডবদের হত্যা করেছেন। কিন্তু তিনি ভুল করে পান্ডবপুত্রদের হত্যা করেন।

পরে, পাণ্ডবরা যখন ফিরে আসেন, তখন তারা সমস্ত কথা জানতে পারেন এবং যুধিষ্ঠির হতাশ হয়ে পড়েন।

এদিকে ভীম অশ্বত্থামাকে হত্যা করার জন্য এদিক ওদিক খুঁজতে থাকেন। 

অবশেষে তিনি গঙ্গার ধারে ঋষি ব্যাসের আশ্রমে খুঁজে পেলেন। অশ্বত্থামা পান্ডবদের জীবিত দেখে ক্রদ্ধ হয়ে হয়ে পান্ডবদের দিকে ব্রহ্মাস্ত্র প্রহার করেন। তাই অপরদিকে অর্জুনও ব্রহ্মাস্ত্র প্রহার করেন ব্রহ্মাস্ত্রকে প্রতিরোধ করতে। যার ফলে দুই ব্রহ্মাস্ত্রের সংঘর্ষে সৃষ্টির বিনাশ ঘটতে পারতো। তাই ভগবান শ্রী কৃষ্ণের পরামর্শে অর্জুন ব্রহ্মাস্ত্র প্রত্যাহার করেন। কিন্তু অশ্বত্থামার ব্রহ্মাস্ত্র ফেরানোর ক্ষমতা ছিল না। তাই তিনি সেই অস্ত্র উত্তরার গর্ভে থাকা শিশুর দিকে নিক্ষেপ করেন, যাতে পাণ্ডব বংশ শেষ হয়।

কিন্তু শ্রী কৃষ্ণ সেই শিশুকে রক্ষা করেন এবং অশ্বত্থামার মণি কেড়ে নেন এবং অভিশপ দেন, তার ক্ষত থেকে রক্ত ঝরবে, শরীরে পচন ধরবে, তিনি মৃত্যু চাইবেন, কিন্তু মৃত্যু পাবেন না।

পুরাণকথানুযায়ী, ব্রহ্মাস্ত্র হলো সবথেকে শক্তিশালী অস্ত্র। যা দেবতাদের শক্তিকেও খর্ব করতে সক্ষম। এই অস্ত্রের অগ্রভাগে ব্রহ্মাজীর চতুর্মস্তক বিরাজ করে। 

এই অস্ত্র ধারণ করার ক্ষমতা রাখতেন, অগ্নিবেশ, পরশুরাম, দ্রোণাচার্য, অর্জুন ও অশ্বত্থামা।

বলা হয়, এই অস্ত্র যখন আহ্বান করা হয়, তখন নাকি ভয়ংকর বজ্রপাত, ভুকম্পন, নদীর শুষ্কতা, উল্কাপিন্ড পৃথিবীর বুকে এসে পড়ে। একপ্রকার ধ্বংসলীলা শুরু হতে থাকে কেবল আহ্বানের সময়কালে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, অস্ত্র নিক্ষেপে কি পরিস্থিতির উৎপন্ন হতে পারে।

এই ব্রহ্মাস্ত্র যেখানে নিক্ষেপ করা হয়, সেখানে প্রায় 50 ব্রহ্মবর্ষ কোনো শস্য উৎপাদন হবে না। 

50 বহ্মবর্ষ অর্থাৎ 155.5 ট্রিলিয়ন মনুষ্য বছর। 

বলা হয়, কলিযুগের শেষে কল্কি অবতার যখন জন্ম গ্রহণ করবেন, তখন অশ্বত্থামা তাকে গুরু হিসেবে শিক্ষা প্রদান করবেন। তাই অশ্বত্থামার অমরত্ব এত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত করা হয়। 

এখনো অনেক জায়গায় শোনা যায়, অশ্বত্থামা এখনও জীবিত থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। 

নর্মদা নদীর আশেপাশে অশ্বত্থামাকে দেখতে পাওয়া ‍যায়। অনেকের মতে, তিনি সেখানে মহাদেবের পুজো করতে আসেন। 

অপরদিকে মধ্যপ্রদেশের বুরহান জেলায় অবস্থিত আসিরগড় দুর্গে অশ্বাত্থামাকে দেখতে পাওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। এই ঘটনা মহাভারতের সময়কাল থেকে চলে আসছে।

সেখানাকার অধিবাসীদের কথায়, তারা ভোররাতে এক যোদ্ধাকে দেখতে পেয়েছে। ওই ব্যক্তি এখানে ওখানে ঘরে বেড়ায় এবং মাথা থেকে রক্ত ঝড়তে থাকে। রক্ত বন্ধ করার জন্য হলুদ ও তেল চাইতে থাকে।

এমনকি মহাদেবের পুজোও সকাল সকাল করে ফেলেন। তাকে যারা দেখেছে, তারা হয় পাগল হয়ে গিয়েছে আর না হলে অন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *